শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ পূর্বাহ্ন

নোটিশঃ
দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সাংবাদিক  নিয়োগসহ পরিচয় পত্র নবায়ণ চলছে।

যাঁরা ব্যাংকের ঋণই পান না, তাঁদের ক্ষেত্রে কী হবে

পয়লা বৈশাখ ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীর নামী শপিং মলে যেমন দামি পোশাক ওঠে, তেমনি ফুটপাতেও বিক্রি হয় সস্তার পোশাক। মধ্যম ও উচ্চ আয়ের মানুষের বাজারকে মাথায় নিয়ে দামি পোশাক তৈরি করে সুপরিচিত ব্র্যান্ড। আর ফুটপাতের পোশাক তৈরি হয় ছোট ছোট কারখানায়। করোনার কারণে সারা দেশে এবারের বৈশাখের কেনাবেচা ভেস্তে গেছে। ঈদের কেনাবেচাও অনিশ্চিত। এতে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন ছোটরা।

করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রায় লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই তহবিল থেকে ব্যবসায়ীদের দেওয়া ঋণের সুদে অর্ধেক ভর্তুকি দেবে সরকার। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যাঁরা ব্যাংকের ঋণই পান না, তাঁদের ক্ষেত্রে কী হবে?

এমনই একজন উদ্যোক্তা পুরান ঢাকার সাইফুল ইসলাম, যিনি নকশী ফ্যাশন নামে স্থানীয় বাজারমুখী একটি পোশাক কারখানার মালিক। ঢাকার উর্দু রোড আর ইসলামপুরে তাঁর ছোট দুটি কারখানায় কাজ করেন ২৫ জন শ্রমিক। স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে আর বাকিতে কাপড় কিনে পয়লা বৈশাখ ও ঈদের বাজার ধরতে দেড় কোটি টাকার পোশাক তৈরি করেছিলেন। কিছুই বিক্রি হয়নি। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘পয়লা বৈশাখের পাঞ্জাবি আর ফতুয়াগুলো গুদামে পড়ে আছে। শ্রমিকেরা শুধু ভাড়ার টাকা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। এখন কী করব, জানি না। শ্রমিকের বেতন কীভাবে দেব। মানুষের ধারের টাকা কীভাবে শোধ করব।’

২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ মিলবে
ছোট উদ্যোক্তারা বলছেন, ব্যাংকের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কই নেই।

ব্যাংকের ঋণ পান কি না, জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংক এত নথিপত্র চায় যে আমাদের পক্ষে তা দেওয়া সম্ভব না। তাই আমরা ঋণ পাই না।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে সাইফুল ইসলামের মতো ছোট উদ্যোক্তাদের ছোট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৮ লাখ ১৮ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠান কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ।

এসব প্রতিষ্ঠানের একটা বড় অংশ আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিংয়ের আওতায় নেই। তারা নগদে লেনদেন করে। ঋণ করে অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে। আবার বেশির ভাগই বাকিতে ব্যবসা করে। এসব খাতের শ্রমিকদের অনেক ক্ষেত্রেই নিয়োগপত্র ও অন্যান্য সুবিধা থাকে না।

অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী ছোট পোশাক কারখানা রয়েছে আড়াই হাজারের মতো। তাদের সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, ৯০ শতাংশ কারখানারই ব্যাংকঋণ–সুবিধা নেই। সরকার ঋণের সুদে যে ভর্তুকি দেবে, তার সুফল এসব কারখানা পাবে না। কারণ তারা তো ঋণই পায় না। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ট্রেড লাইসেন্স ও টিআইএন দেখে সমিতির সুপারিশে তাদের ঋণ দেওয়া হোক।’

দেশজুড়ে ছোট ছোট বহু খাত রয়েছে। শত শত প্লাস্টিক কারখানা, চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য তৈরির কারখানা, ভৈরবের পাদুকাশিল্প, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বস্ত্রশিল্প, বেকারি ও খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, বিসিক শিল্পনগরের ছোট ছোট কারখানা, সারা দেশের খুচরা ও পাইকারি দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ, পর্যটন সেবা প্রদানকারী—কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত সবাই।

ঢাকায় গত কয়েক বছরে তরুণ উদ্যোক্তাদের হাত ধরে বহু রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। তারই একটি উত্তরায় ওল্ড টাউন রেস্টুরেন্ট। সেটির মালিক কে এম মনজুর আহমেদ বললেন, মাসে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা স্থায়ী ব্যয়। রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকলেও এ ব্যয়টি করতেই হবে। এবারের ধাক্কায় বহু তরুণ উদ্যোক্তা সর্বস্বান্ত হবে।

 বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি জানিয়েছে, ১৫ জনের কম কর্মচারী থাকা পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের দিনে সম্মিলিত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৭৪ কোটি টাকা।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এসব ছোট ছোট খাতকে সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করেছে। সংগঠনটির সভাপতি শামস মাহমুদ মনে করেন যাঁরা নগদে ব্যবসা করেন, সেই সব উদ্যোক্তার জন্য সরকারের নতুন কোনো কৌশল ঠিক করতে হবে। তিনি বলেন, ছোট ব্যবসায়ীরাই অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙা রাখে। তাই তাদের টিকিয়ে রাখা খুবই জরুরি।

ছোটদের জন্য সরকার যে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করেছে, তা থেকে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ দিতে বলা হয়েছে। নতুনেরাও ঋণ পাওয়ার যোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সমস্যা হলো বাংলাদেশে ছোট উদ্যোক্তা বা নতুনদের জন্য ব্যাংকের দরজা সব সময় খোলা থাকে না।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর তিনটি সুপারিশ করেন। প্রথমত, যারা ঋণ পাওয়ার যোগ্য তাদের ব্যাংকের আওতায় নিয়ে আসা। দ্বিতীয়ত, ছোটদের ঋণ দিতে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোকে যুক্ত করা। তৃতীয়ত, এসএমই ফাউন্ডেশনের সুপারিশে বিভিন্ন গুচ্ছভিত্তিক শিল্পে ঋণের ব্যবস্থা করা। তিনি বলেন, কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। সংকটকালে সহায়তা পাওয়ার অধিকার সবার আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

All rights reserved © meghnapost.com